দেবী দূর্গার পরিচয়, দূর্গাদেবী কে, তাঁর সাথে ভগবানের সম্পর্ক কী? - KrishnoKotha.com
দেবী দূর্গার প্রণাম মন্ত্রে বলা হয়েছে-
যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
অর্থাৎ "যে দেবী সর্বভূতে (সর্বজীবে) বিষ্ণু মায়ারূপে বিরাজ করেন, তাঁকে বারংবার নমস্কার।"
দেবী দূর্গার পরিচয়, দূর্গাদেবী কে, তাঁর সাথে ভগবানের সম্পর্ক কী? - KrishnoKotha.com |
সুতরাং,
দেবী দূর্গা হলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের মায়া শক্তির প্রকাশ। আমরা শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে গেছি বিধায় শ্রীকৃষ্ণেরই ইচ্ছায় তিনি আমাদের সংশোধনের জন্য এ জড় জগৎরূপ দুর্গ বা কারাগারে আবদ্ধ করে রেখেছেন।
মহামায়ারূপে দূর্গাদেবী এ জগৎরূপ কারাগারে আমাদের আধি-আত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক - এ তিন প্রকার ক্লেশ প্রদান করছেন, যার প্রতীকরূপে তাঁর হাতে ত্রিশূল দেখা যায়। এভাবে তিনি আমাদের দুঃখ প্রদান করছেন। তিনি এই জড় জগত রুপ কারাগারের জেলার।এক জেলার যেমন কয়েদিদের শোধন করার জন্য তাদের শাস্তি দেন ঠিক তেমনি দূর্গা দেবী আমাদের কর্ম ফল অনুযায়ী আমাদের শাস্তি প্রদান করে আমাদের পাপ মুক্ত করেন।
আধ্যাত্মিক ক্লেশঃ
জড়দেহ ও মন থেকে উৎপন্ন দুঃখ, যেমন- ক্ষুধা-তৃষ্ণা, শোক-ভয়, বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি, মানসিক যন্ত্রণা - উদ্বেগ ইত্যাদি।
আধিভৌতিক ক্লেশঃ
অন্য কোনো জীবের কাছ থেকে প্রাপ্ত দুঃখ; যেমন- বিভিন্ন রোগ-জীবাণু, মশা-মাছি-ছাড়পোকা, হিংস্র জন্তু-জানোয়ার ইত্যাদির কাছ থেকে দুঃখ। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, হ্যাকিং, যুদ্ধ-বিবাদ, শত্রুতা, ষড়যন্ত্র, হানাহানি, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, এসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি।
আধিদৈবিক ক্লেশঃ
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ যে ক্লেশ পেয়ে থাকে; যেমনঃ ঝড়-তুফান, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, খড়া-বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, অত্যধিক গরম, অত্যধিক ঠাণ্ডা ইত্যাদি।
তবে কি দেবী দূর্গা আমাদের কেবল দূঃখ প্রদান করেন? যদি তাই হয়, তাহলে কেন আমরা তার পূজা করি?
না, দেবী দূর্গা আমাদের দুঃখ এবং সুখ উভয় প্রদান করেন। জেলার যেমন কয়েদীকে দুঃখ দানের মাধ্যমে সংশোধন করেন এবং কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পথ প্রশস্ত করেন, তেমনি বদ্ধজীবদের দুঃখ দানের মাধ্যমে দূর্গাদেবী জীবকে পাপের ফল ভোগ করান এবং প্রতিনিয়ত দুঃখ পাওয়ার ফলে জীব এ জগৎ যে দুঃখালয় ও অশাশ্বত তা অনুভব করে।
তারা ভগবানের ভজন করার জন্য প্রচেষ্টা করে আর এই জড় জগত রুপ কারাগারের জন্ম মৃত্যু রুপ চক্রের থেকে মুক্ত হয়ে নিত্য আনন্দ ময় আলয় ভগবদ্ধামে গমন করেন।
বদ্ধজীবের প্রতি দেবী দূর্গার দুই প্রকার কৃপাঃ-
১)সকপট কৃপাঃ এই কৃপা দ্বারা দেবী মায়ামুগ্ধ জীবদের ধন, জন, রূপ, যশ ইত্যাদি জড় বিষয় প্রদান করে মায়া দ্বারা মোহিত করে রাখেন।
২)অকপট কৃপাঃ এই কৃপা দ্বারা তিনি জীবকে কৃষ্ণভক্তি প্রদান করেন।
এভাবে, দেবী দূর্গা মহামায়া রূপে অনিত্য জড় সুখ ও দুঃখ দানের মাধ্যমে জীবকে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখেন এবং তিনিই যোগমায়া রূপে আমাদের এ দূর্গতি নাশ করেন, মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের চিন্ময়ধামে ফিরে যেতে সহায়তা করেন। তাই তিনি একই সঙ্গে দূর্গতি দায়িনী এবং দূর্গতি নাশিনী। দেবী দূর্গা সম্পর্কে ব্রহ্মসংহিতায় বলা হয়েছে,
সৃষ্টিস্থিতিপ্রলয়সাধনশক্তিরেকা ছায়েব যস্য ভুবনানি বিভর্তি দূর্গা।
ইচ্ছানুরূপমপি যস্য চ চেষ্টতে সা গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।
অর্থাৎ, "স্বরূপশক্তি বা চিৎশক্তির ছায়া স্বরূপা প্রাপঞ্চিক জগতের সৃষ্টি - স্থিতি - প্রলয় - সাধিনী মায়াশক্তিই ভুবনপূজিতা 'দূর্গা', তিনি যাঁর ইচ্ছানুরূপ চেষ্টা করেন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।" সুতরাং দেবী দূর্গা হলেন শ্রীকৃষ্ণের মায়াশক্তি।
তো আমরা জানলাম যে দেবী দূর্গা হলেন এই জগতের জেলার। তিনি ভগবান গোবিন্দের ইচ্ছায় এই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় করেন। তিনি আমাদের কর্ম ফল অনুযায়ী শাস্তি দিয়ে মাম মুক্ত করেন।যারা দূর্গা উপাসনা করেন তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন।
এবার আমরা জানব আমাদের কি করনীয়। কি ভাবে দূ্র্গা পুজা পালন করা উচিৎ?
আজকাল আমরা কি করছি?কোটি টাকা খরচা করছি পান্ডাল ,লাইটিং,থিম,ডিজে এসবের পেছনে।
মদ্য পান করে ডিজে বাজিয়ে অর্ধ নগ্ন অবস্থায় ,অচেতন অবস্থায় ছেলে মেয়ে একসাথে মায়ের সামনে নাচছি। এটা কি ধরনের পুজা?
এটা কি মাকে সন্মান দেয়া না মায়ের অবমাননা করা। ভাবুন নিজের মায়ের সামনে এভাবে মাতাল হয়ে নাচতে আমার মা কতোটা কষ্ট পাবে?
আর সে তো জগতের জননী।
কেউ কেউ মায়ের সামনে ছাগল,মোষ,ভেরা ,পায়রা এসব বলি দিচ্ছে। তিনি শুধু মানুষের নয় জগতের জননী ,জগতের প্রতিটি জীব তার সন্তান।
তিনি নিরীহ পশুদের ও জননী।কোন মায়ের সামনে এভাবে তার সন্তান দের বলি দিয়ে কেউ যদি সুখী হওয়ার পার্থনা করে দেবি তাকে কি ফল দেবেন,
নিজের মনে বিবেচনা করে দেখুন?
আমরা আমাদের এই নিকৃষ্ট কর্মের জন্য প্রতিদিন দুঃখ কষ্ট ভোগ করছি আর মায়ের ওপর দোষারোপ করি মা আমায় কেন এত কষ্ট দিচ্ছো দুঃখ দিচ্ছো?
ভাবুন এর কারণ আমরা নিজেরাই না কি ভগবান?
দেবীকে শুদ্ধতার সাথে পুজো করতে হয় শাস্ত্র বিধি অনুযায়ী। আজকাল অল্প জ্ঞানি কিছু ব্রাহ্মন নিজের ইচ্ছা মত যেমন ইচ্ছে পুজো করে তাদের নিজেদের কোন শুদ্ধতা নেই। ভুল মন্ত্র উচ্চারণ করে । সংস্কৃত পরতে পারেন না তো মন্ত্র কি পরবে?মন্ত্রের মানে গুলো জিজ্ঞেস করলেই বুঝতে পারবেন।
প্রত্যেককে শুদ্ধ তার সাথে পুজো করতে হয়।
আর যেহেতু তিনি বৈষ্ণবী মাতা তাই আগে বিষ্ণুর পুজো করে তারপর দূ্র্গা পুজা করতে হয়। আপনারা দেখেছেন নিশ্চয়ই আগেকার দিনে দূ্র্গা পুজোয় ব্রাহ্মন রাত আগে শালগ্রাম শীলা রুপে বিষ্ণুর পুজো করে তারপর দূ্র্গা পুজা করতেন।
জীব হত্যাথেকে দুরে থেকে নিরামিষ ভোজন করে পুজো অবধি উপবাস থেকে পুজো করতে হয়। বছরে কয়েক টা দিন তো পালন করুন।
আর মায়ের কাছে শুদ্ধমনে ভগবানের কৃপা ও ভক্তি কামনা করুন।
হে বৈষ্ণবী মাতা দূর্গা আপনি পরম বৈষ্ণবী আপনি আমাদের ওপরে কৃপা করুন আমরা যেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেম ভক্তি লাভ করতে পারি।
আপনার কৃপায় এই জড় জগত রুপ কারাগারের দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্ত হয়ে জন্ম মৃত্যু রুপ চক্রের থেকে মুক্ত হয়ে ভগবানের ধামে ফিরে যেতে পারি।
বৃন্দাবনের গোপীরা পর্যন্ত কৃষ্ণ কে পতী রুপে পাওয়ার জন্য পুরো একমাস দেবী কাত্তায়নীর ব্রত
পালন করেছিলেন।আর দেবীর কৃপাতে তারা ভগবানের সাথে রাসলীলা করার সৌভাগ্য প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এমনকি দেবাদিদেব শিব ও গোপী রুপ ধারণ করে সেই রাসলীলা তে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।আজো বৃন্দাবনে শিবজী গোপেশ্বর মহাদেব রুপে পুঁজিত হচ্ছেন।
জয় মা দূর্গা
হরেকৃষ্ণ