কলিযুগের ভবিষৎবানী - KrishnoKotha.com

আমাদের বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন না আগামী দশ বছর পরে কি হবে, ফিজিক্স ও কেমেস্ট্রির সমস্ত নিয়ম প্রয়োগ করেও নয় । বৈদিক শাস্ত্রে হাজার হাজার, এমন কি লক্ষ-কোটি বছরের অভ্রান্ত ভবিষৎবানী দেওয়া হয়েছে । কলিযুগ সম্পর্কে শাস্ত্রে কলিযুগ শুরু না হতেই ভবিষৎবানী প্রদান করেছেন । আজ থেকে ৫০০০ বছর আগে শ্রীল ব্যাসদেব এই ২টি শাস্ত্রে কলিযুগ সম্পর্কে ভবিষৎবানী করে গেছেন । একটি হলো শ্রীমদ্ভাগবত আরেকটি হলো লিঙ্গ পুরানে । আমরা দেখব এই দুটি শাস্ত্রে নিঁখুতভাবে কিভাবে কলিযুগ সম্বন্ধে বলা হয়েছে ।

কলিযুগের ভবিষৎবানী - KrishnoKotha.com
কলিযুগের ভবিষৎবানী - KrishnoKotha.com


লিঙ্গ পুরাণ

এই পুরানে ১ম স্কন্ধে ৪০ তম অধ্যায় ১০০টি শ্লোকে কলি যুগ সম্পর্কে বলা হয়েছে । তার কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হল

১) কলিযুগের মানুষ ধর্ম পরায়ন না হয়ে বিষয়ভোগ ও ইন্দ্রিয়তৃপ্তি পরায়ন হবে ।
২) কলিকালে প্রমাদ, সর্বদা রোগগ্রস্থ, ক্ষুদা, ভয়, অসময়ে অনাবৃষ্টি ও দেশে দেশে বিবাদ আর দেশের বিপর্য্যয় ঘটবে ।
৩) প্রামান্য শাস্ত্র না মেনে মনগড়া শাস্ত্র উৎপন্ন করে অধর্মপরায়ন হবে ।
 
৪) এই যুগে ব্রাহ্মনের কর্মদোষেই প্রজাদিগনের ভয় উৎপন্ন হবে, ব্রাহ্মনগন বৈদিক শাস্ত্র অধ্যায়ন পরিত্যাগ করবে, তারা তপোযজ্ঞ ফলের বিক্রেতা হবেন, বৈদিক শাস্ত্রের বৈদিক কর্মের নিন্দা করবেন, কিছুটা বৈদিক শাস্ত্র সম্পর্কে জানলেও তারা বৈদিক নিয়মানুসারে জীবনযাপন করবেন না এবং কোন বর্ণাশ্রম ধর্ম থাকবে না ।

৫) ব্রাহ্মনগন শূদ্রের আচরন আর শূদ্রগন ব্রাহ্মনের আচরন করবে এবং অনেক সন্ন্যাসবেশধারী দেখা যাবে ।
৬) ভারত ভূমিতে (পুরো পৃথিবী) ভ্রুন হত্যা হবে । আর ভ্রুন হত্যার জন্য তারা নানা ধরনের পরিকল্পনা করবে ।

৭) চোরেরা রাজা হবে (বা রাষ্ট্রনেতা হবে), রাজারা চোরে পরিণত হবে ।
৮) স্ত্রীরা ব্যভিচারী হবে, তারা পতিব্রতা হবে না আর স্বামীরা স্ত্রীদের নির্যাতন করবে এবং কোথাও কোথাও নারী দ্বারা পুরুষেরা শোষিত হবে । আর পুরুষের ভাগ অল্প হবে এবং স্ত্রীর ভাগ অধিক হবে ।

৯) রাজারা রক্ষক না হয়ে প্রজাদের নিকট শুধু হরণ করবে ।
১০) এই কলিকালে পৃথিবীতে অল্প ফল হবে কোথাও কোথাও বহুফল উৎপন্ন হবে ।

১১) শূদ্ররা অল্প শাস্ত্রজ্ঞান এবং অল্প শুভ মঙ্গল দ্রব্য দ্বারা পূজিত হবে, আর যাদের আর্থিক পরমান বেশি থাকবে তারা চোর হলেও সমাজে সাধু বলে তারা সন্মানিত হবে ।
১২) এই কলিযুগে শ্বাপদ (কুকুর, বিড়াল, বাঘ ইত্যাদি হিংস্রপ্রাণী) এরা আদর প্রাপ্ত হবে, গো-গণ (গরু) এদের হত্যা করা হবে আর সাধুদের বিনাশ করা হবে ।

১৩) এই যুগে দানধর্ম খুব বেশি দেখা যাবে ।
১৪) নৃপতি (দেশের প্রধান বা রাজা) প্রজারক্ষনে অবহেলা করবেন, জনগন থেকেই কেবল কর গ্রহণ করবেন ।

১৫) জনপদ বা রাস্তায় অন্ন ও কন্ন্যা বিক্রয় হবে, চতুস্পদে বেদ বিক্রয় হবে, স্ত্রীগণ বেশ্যাবৃত্তি আচরণে পণ্যস্বরূপ হবে এবং আশ্চার্য্য বৃষ্টি হবে অর্থাৎ উত্তম বৃষ্টি হবে ।
১৬) এই কলিকালে সকলেই বার্ন্ধুষিক (অর্থাৎ সুদখোর) হবে । আসব পান, নেশা আর আমিষাহার তাদের নিত্যদিনের কর্ম হবে ।

১৭) বসুমতিকে (পৃথিবী) এমন নির্যাযিত করবে বসুমতি ধনধান্যপরিপূর্ণ করবে না ।
১৮) দেশে দেশে, নগরে নগরে কেবল জনশূণ্য স্থান হবে, জলের সংকট দেখা দিবে, ফলের সংকট দেখা দিবে । বেকার ও ভিক্ষুকের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে ।

১৯) কলিযুগের শেষে পৃথিবীতে পুরুষগন অশাসন হয়ে পড়বে, কেবল পরবিত্ত হরণ, পরস্ত্রী ধর্ষন, সাহস প্রিয়তা দেখা দিবে ।
২০) কলিযুগের শেষে মানুষের গড় আয়ু ১৬ বছর হবে এবং পঞ্চবিংশতি আঙ্গুলি (২৫ আঙুল সমান) মানুষের আকার হবে ।

২১) কাষায় বসন (অল্প বস্ত্র) পরিধান করবে, দেশে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে, সবাই শস্য চুরি করবে, অন্যের ধন অন্যায় ভাবে অপহরন করবে, বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হবে । যোগ্য কর্ম সকল বিনষ্ট হবে, লোক সকল নিষ্ক্রিয় হবে, ক্ষুদা ও ভয়ে কাতর হয়ে নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাবে ।

২২) কীট, মূষিক(ইঁদুর) ও সর্প মানবগনকে হিংসা করতে থাকবে ।
২৩) শস্য উৎপাদন করে বেশি লাভের আশায় খাদ্য সংকটের সৃষ্টি করবে, বাজারে অন্ন, জল আর বাতাশ বিক্রয় করা হবে । (সংক্ষিপ্ত)
এবার দেখা যাক শ্রীমদ্ভাগবতে কলিযুগ সম্পর্কে কি বলেছে

১) কলির প্রবল প্রভাবে ধর্ম, সত্যনিষ্ঠা, শুচিতা, ক্ষমা, দয়া, আয়ু, দৈহিক বল এবং স্মরণ শক্তি দিনে দিনে হ্রাস পাবে । (ভাগবত ১২/২/১)
২) কলিযুগে ধনদৌলতই কেবল মানুষের শুভ জন্ম, যথার্থ ব্যবহার এবং সমস্ত সদ্‌গুণাবলীর চিহ্ন বলে বিবেচিত হবে । মানুষের গায়ের জোরে ভিত্তিতেই ধর্ম এবং আইন প্রয়োগ করা হবে । (ভাগবত ১২/২/২)

৩) শুধু বাহ্য আকর্ষনের ফলেই নারী এবং পুরুষ একত্রে বসবাস করবে । বাণিজ্যে সাফল্য নির্ভর করে প্রতারণার উপর । রতিক্রিয়া দক্ষতা অনুসারে নারীত্ব ও পুরুষত্বের বিচার হবে এবং শুধুমাত্র পৈতা ধারণের মাধ্যমে কোন মানুষ ব্রাহ্মন বলে পরিচিত হবে । (ভাগবত ১২/২/৩)

৪) শুধুমাত্র বাহ্য প্রতীক অনুসারে ব্যক্তির আশ্রম নির্ধারন করা হবে এবং এই ভিত্তিতেই মানুষ এক আশ্রম থেকে পরবর্তী আশ্রমে স্থানান্তরিত হবে । যতেষ্ট উপার্জনে অক্ষম ব্যক্তির নৈতিকতা সম্পর্কে গুরুতর সন্দেহ আরোপ করা হবে । এবং যিনি খুব বাক্‌চাতুর্য প্রদর্শন করতে পারবেন, তাকে বিজ্ঞ পন্ডিত বলে গন্য করা হবে । (ভাগবত ১২/২/৪)

৫) কোন মানুষের হাতে যদি টাকা না থাকে, তাকে অসাধু বলে গণ্য করা হবে । ভণ্ডামীকে গুণ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে । শুধুমাত্র মৌখিক স্বীকৃতির ভিত্তিতে বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে এবং মানুষ মনে করবে যে শুধুমাত্র স্নান করলেই তিনি জনসমাজে উপস্থিত হোওয়ার যোগ্য হয়েছেন । (ভাগবত ১২/২/৫)

৬) দূরে অবস্থিত জলাশয়কেই তীর্থরূপে গন্য করা হবে । উদরপূর্তি হবেই জীবনের লক্ষ্য এবং ধৃষ্ট ব্যক্তিকে সত্যনিষ্ঠ বলে স্বীকার করা হবে । পরিবার ভরণপোষণে সক্ষম ব্যক্তিকে সুদক্ষ বলে গণ্য করা হবে এবং শুধুমাত্র খ্যাতি অর্জনের জন্যই ধর্ম অনুষ্ঠান করা হবে । (ভাগবত ১২/২/৬)

৭) পৃথিবী যখন দুষ্ট প্রজাদের দ্বারা জনাকীর্ন হয়ে উঠবে, তখন সমাজের বিভিন্ন বর্ণের মানুষের মধ্যে যিনি নিজেকে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে প্রদর্শন করতে পারবেন, তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করবেন । (ভাগবত ১২/২/৭)

৮) ঐ সমস্ত লোভী, নিষ্ঠুর দস্যু স্বভাব রাজারা প্রজাদের স্ত্রী ও সম্পত্তি অপহরন করবে এবং প্রজারা পর্বত-জঙ্গলে পলায়ন করবে । (ভাগবত ১২/২/৮)

৯) অতিরিক্ত কর এবং দূর্ভিক্ষের দ্বারা পীড়িত হয়ে মানুষ শাক পাতা, বৃক্ষমূল, মাংস, বন্যমধু, ফল, ফুল এবং ফলের বীজ খেতে শুরু করবে । খরায় পীড়িত হয়ে তারা পূর্ণরূপে ধ্বংস হবে । (ভাগবত ১২/২/৯)

১০) তুষারপাত, প্রবল বর্ষন, প্রখর তাপ, ঝড় এবং ঠান্ডায় মানুষ অশেষ কষ্ট ভোগ করবে । ঝগড়া, ক্ষুদা, তৃষ্ণা, রোগ এবং প্রচন্ড উদ্বেগ উৎকন্ঠায় তারা আরও সন্তপ্ত হবে । (ভাগবত ১২/২/১০)

১১) জনপদগুলি দস্যুতস্করে অধ্যুষিত হবে, নাস্তিকদের কাল্পনিক ব্যাখ্যায় বেদ দূষিত হবে, রাজনৈতিক নেতারা বস্তুতপক্ষে প্রজাদের ভক্ষণ করবে, আর তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ব্রাহ্মন পুরোহিতেরা হবে শিশ্লোদর পরায়ণ । (ভাগবত ১২/৩/৩২)

১২) গাভী যখন দুধ দিতে অক্ষম হবে তাদের হত্যা করা হবে । (ভাগবত ১২/৩/৩৬)

১৩) সংস্কৃতিবিহীন ব্যক্তিরা ভগবানের পক্ষ হয়ে দান গ্রহন করবে । ভিক্ষুক বেশ গ্রহন করে তপস্যার অভিনয় করে জীবিকা নির্বাহী করবে । যারা ধর্ম সম্পর্কে জানে না তারা উচ্চাসনে বসে ধর্ম আলোচনা করার স্পর্ধা করবে । (ভাগবত ১২/৩/৩৮)

১৪) কলিযুগের মানুষ কয়েক পয়সার জন্য নিজেদের মধ্যে শত্রুতা করবে । আর আত্মীয়স্বজনদের হত্যা করবে । (ভাগবত ১২/৩/৪১)
১৫) মানুষ তাদের বয়স্ক পিতা মাতাকে আর দেখবে না । (ভাগবত ১২/৩/৪২) (সংক্ষিপ্ত)

পৃথিবীর কোনো চিন্তাবিদ্ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না আগামী ১০০ কি ১০০০ বছর পর পৃথিবীর সভ্যতা কেমন হবে । হাজার হাজার বছর পূর্বের ভবিষৎবানী অভ্রান্তভাবে মিলে যাওয়া শাস্ত্রীয় জ্ঞানের অভ্রান্ততাকে বিতর্কহীনভাবে প্রমান করে । তর্করোগীরা নয়, সুস্থমস্তিষ্কের বিচারবুদ্ধিশীল মানুষ উপলব্ধি করতে পারেন যে শাস্ত্র বিশ্বাসের বস্তু নয়, প্রামাণিক আধ্যাত্মবিজ্ঞান, যা মানবসমাজের অনুসরণীয় ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
শ্লোক ও শ্লোকার্থমন্ত্র - Krishno-Kothaমূর্তিপূজা সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তরভগবান শ্রী কৃষ্ণের অমৃত লীলা কথা৩০টি প্রনাম মন্ত্রের তালিকাযে সকল মানুষ গীতার জ্ঞান বুঝে নাহিন্দু ধর্মীয় বিষয়ক ১০০টি প্রশ্ন ও উত্তরশ্রীমদ্ভগবদগীতার-অর্জুন বিষাদ-যোগশ্রীমদ্ভগবদ্গীতার মাহাত্ম্য পড়ুনমঙ্গলাচরণ ( Moggolacoron )গীতায় যে ৫টি জিনিস সর্ম্পকে জানা পারিপ্রশ্ন ও উত্তর - Krishno Kothaশ্রী শ্রী দেবী সরস্বতী - Krishno Kothaসরস্বতী পুজোর আগে কুল (বরই) খাইনা কেন?মানুষের অবাধ মিলনের বিরাট বাধা স্বরূপে সাম্প্রদায়িকতাসর্বজীবের ভগবান শ্রীকৃষ্ণতুলসী তত্ত্বভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনীনীতিশিক্ষামূলক গল্প২৮ টি নরকের মধ্যে অন্যতম "অসিপত্রবন"গুরু কে? যারা জানতে আগ্রহীপ্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপূজা করবেন কিভাবে?হিন্দু ধর্মের লোকেরা হাতে লাল সুতো বাঁধে কেন?শ্রী রামচন্দ্রের কিছু অমৃত বাণীপবিত্র_বেদ এর কিছু চমৎকার অমৃত বাণীরাধা কৃষ্ণের দিব্য সম্পর্কসিঁন্দুর সম্পর্কে তথ্যকলিযুগে ধর্ম নিয়ে এত রেষারেষির কারণসনাতন শাস্ত্র মতে মায়ের স্থান কোথায় সে সম্পর্কেনবধারা ভক্তি সম্পর্কেমৃত্যু রহস্য সম্পর্কেসনাতন শাস্ত্রে বর্ণিত একাদশী তত্ত্ব সম্পর্কেশ্রী কৃষ্ণের ভক্ত শুদ্ধ ভক্ত সর্বদা আমার হৃদয়ে থাকেনভগবান শ্রী কৃষ্ণের অষ্টশত নামগীতাপাঠ প্রসঙ্গ - Krishno Kothaগীতায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী